বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
AM | | Editor: Arijit Mondal ০৫ জুলাই ২০২৪ ১৯ : ৪৫Arijit Mondal
শমিত ঘোষ
লোকসভা নির্বাচনের পর্ব মিটতে না মিটতেই রাজ্যে আবার ভোট! আপাতদৃষ্টিতে উপনির্বাচনে শাসক দলের পক্ষেই হাওয়া থাকে। কিন্তু, আগামী ১০ তারিখ অনুষ্ঠিত হতে চলা, চার কেন্দ্রের উপনির্বাচন কিন্তু নানা কারনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি দুই দলের কাছেই এই চারটি কেন্দ্রের নির্বাচন আলাদা তাৎপর্য বহন করছে। বিজেপির কাছে যেমন বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ, রায়গঞ্জ ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। তেমনই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের কাছে কার্যত প্রেস্টিজ ফাইট! কারণ, লোকসভায় এরাজ্যে ২৯ টি আসন পাওয়ার পরে তৃণমূল কংগ্রেস স্বাভাবিকভাবেই চাইবে তাদের জয়ের 'মোমেন্টাম'টা ধরে রাখতে। ১০ তারিখের নির্বাচনের ফল বেড়োবে ১৩ ই জুলাই। তার ৮ দিনের মাথাতেই তৃণমূল কংগ্রেসের বাৎসরিক 'মেগা ইভেন্ট' ২১শে জুলাই। স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূল কংগ্রেস চাইবে নিজেদের জয়ের ধারা কে অক্ষুন্ন রেখেই ২১শে জুলাই পালনে মন দিতে!
রাজনীতির সাধারণ হিসেব বলে, রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলই সাধারণত উপনির্বাচনে জেতে। কিন্তু দেড় বছর আগের সাগরদিঘী উপনির্বাচনের ফলাফলের তিক্ত অভিজ্ঞতা এখনো শাসক তৃণমূলের কাছে টাটকা। কংগ্রেসের প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের কাছে সেবার হার স্বীকার করতে হয়েছিলো তৃণমূল প্রার্থীকে। ফলে, এই চার উপনির্বাচন নিয়ে কোনো রকম ঝুঁকি নিচ্ছে না তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ, চারটি আসনের তিনটিতেই সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও এগিয়ে বিজেপি। এমনকি ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় চারটি বিধানসভাতেই নিজেদের ভোট বাড়াতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। কৃষ্ণ কল্যানী, মুকুটমনি অধিকারী, বিশ্বজিৎ দাস'রা দুহাজার একুশের নির্বাচনে বিজেপি'র টিকিটে যত ভোটে জিতেছিলেন, দু'হাজার চব্বিশে দল বদলে তৃণমূলের টিকিটে নিজেদের নির্বাচিত বিধানসভাতেই অনেক বেশী ভোটে হেরেছেন! মানিকতলায় ২০২১ সালে বিজেপি পেয়েছিলো ৪৭,৩৩৯ টি ভোট। ২০২৪ এ সেই মানিকতলাতেই বিজেপি পেয়েছে ৬৩,৩৮৯ টি ভোট! অর্থাৎ খাস কলকাতাতেও ভোট বাড়িয়েছে বিজেপি।
আসন্ন উপনির্বাচনে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ 'ফ্যাক্টরে'র দিকে তাকিয়ে। যার মধ্যে অন্যতম হলো, রাজ্য বিজেপি'তে শুভেন্দু-সুকান্ত জুটির ভবিষ্যত! সুকান্ত মজুমদার যতই বিভিন্ন জায়গায় দাবী করুন, লোকসভায় আসন কমলেও বিধানসভা ভিত্তিক ফলে বিজেপি ২০২১ এর তুলনায় ভালো ফল করেছে।(২০২১ এ বিজেপির আসন সংখ্যা ছিলো ৭৭। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভা ভিত্তিক ফলে বিজেপি এগিয়ে ৯০ টি মতো আসনে)। আদতে, ২০২১ এবং ২০২৪ এর নির্বাচন এক নয়। ২৪ এর নির্বাচন ছিলো দেশের নির্বাচন। সেখানে নরেন্দ্র মোদি ছিলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ 'ফ্যাক্টর'৷ এছাড়া দেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটা বড় অংশের মানুষ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজেপি'কে ভোট দিয়েছিলেন। কারন, বিজেপির দিক থেকে লাগাতার প্রচার ছিলো, মোদি'র সমতুল্য বিপক্ষ জোটের মুখ কে? বিপক্ষ 'ইন্ডিয়া' জোটের 'মুখ' কেউ ছিলেননা! রাজ্যের নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিন্তু, এই সমীকরণটাই পুরো উল্টে যায়! কারণ এক্ষেত্রে রাজ্যের শাসক দলের কাছে একজন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন৷ যার সমতুল্য কোনো মুখ এখনো রাজ্য রাজনীতিতে কাউকে দেখা যাচ্ছেনা! ফলে বিধানসভা নির্বাচনে এই 'অ্যাডভ্যান্টেজ'টা পুরোপুরি পায় তৃণমূল কংগ্রেস। শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারদের কাছে এই উপনির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন এই তিনটি আসন এবং মানিকতলায় গত দু'টি নির্বাচনের ভোট ধরে রাখা। ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে নিজেদের জেতা আসন বিজেপিকে হারাতে হয়েছে। রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদায় যদি বিজেপি হারে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্ব নিয়ে কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই আরো প্রশ্ন উঠবেই! আর সেই প্রশ্নটা উঠবে বিজেপির অন্দরেও!
এই উপনির্বাচনের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মতুয়া ভোট কোন দিকে? ৪টি আসনের মধ্যে বাগদা এবং রানাঘাট দক্ষিণে মতুয়া ভোটাররাই নির্নায়ক শক্তি। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বাগদায় ২০,৬০০ এবং রানাঘাট দক্ষিণে প্রায় ৪০,০০০ হাজার ভোটে এগিয়ে বিজেপি৷ লোকসভার ফলেও স্পষ্ট, মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁ এবং রানাঘাট দুটি লোকসভা আসনেই মতুয়াদের সিংহভাগ বিজেপি'কে ভোট দিয়েছে। তার অন্যতম কারণ হতে পারে, লোকসভা নির্বাচনের একদম আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের সি-এ-এ'র মাধ্যমে নাগরিকত্ব প্রদানে মতুয়ারা প্রভাবিত হয়েছেন। যদিও এখনো অবধি নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সংখ্যা অত্যন্ত নগন্য। তবুও একথা বলাই যায়, যে সি-এ-এ মতুয়াদের মধ্যে প্রভাব ফেলেছেই। এবং কার্যত ২০১৯ থেকেই যে মতুয়া ভোট পদ্মমুখী, সেই 'ট্রেন্ড' একই রকম বহাল থেকেছে লোকসভা নির্বাচনেও।
খানিক এর পুরস্কার স্বরূপই বোধহয়, তৃতীয় নরেন্দ্র মোদি সরকারে যে দু'জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পেয়েছে বাংলা, তাদের একজন মতুয়া ঠাকুর বাড়ির শান্তনু ঠাকুর। মতুয়া ভোটের ক্ষেত্রে ঠাকুর বাড়ি যে এখনো শেষ কথা, তা জানেন বিজেপি'র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বড়মা বীনাপানি দেবী যত দিন বেঁচে ছিলেন, তাঁর স্নেহধন্যা ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মতুয়ারাও সেই সময় ঢেলে ভোট দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসকে। বড়মা বীনাপানি দেবীর প্রয়ানের পরে, একদা উত্তর ২৪ পরগণার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা বর্তমানে জেলবন্দি এক নেতার সঙ্গে প্রথম দ্বন্দ্ব শুরু হয় ঠাকুর পরিবারের মঞ্জুল কৃষ্ণ ঠাকুর এবং তাঁর পুত্র শান্তনু ঠাকুরদের। সেই দ্বন্দ্ব আজও মেটেনি। বড়মায়ের আরেক পুত্র কপিল কৃষ্ণ এক সময় ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ। কপিল কৃষ্ণের অকাল প্রয়ানের পরে তাঁর স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুরকেও তৃণমূলের টিকিট দিয়ে সাংসদ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, মতুয়া সমাজের গোঁসাই-দলপতি-পাগলদের একটা অংশের অভিযোগ, মতুয়া মহাসঙ্ঘে মমতা বালা ঠাকুর তেমন প্রভাব কোনো দিনই বিস্তার করতে পারেননি। মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে শান্তনু ঠাকুরের দ্বৈরথ অত্যন্ত চর্চিত। শান্তনু ঠাকুরদের অভিযোগ, মমতাবালা ঠাকুর শুধুই ঠাকুর পরিবারের পুত্রবধূ। তাঁর সঙ্গে সরাসরি কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। তিনি, হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুরের সরাসরি বংশধর নন! শান্তনু ঠাকুরদের আরো অভিযোগ, মমতাবালা ঠাকুর দীর্ঘদিন ঠাকুর বাড়িতে থাকেনইনি৷ তিনি আলাদা থাকতেন। এই অভিযোগের কি কি সারবত্তা আছে, তা বলা কঠিন। তবে ভোট রাজনীতিতে মমতাবালাকে হারিয়েছেন শান্তনু ঠাকুর। এমনকি গত লোকসভা নির্বাচনের সময়ে, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস'কে 'নকল মতুয়া' বলেও কটাক্ষ করেছেন শান্তনু ঠাকুর-সুব্রত ঠাকুর'রা। হরিচাঁদ ঠাকুর -গুরুচাঁদ ঠাকুরের সরাসরি বংশধর এই পরিচয়ে এক আত্মশ্লাঘা অনুভব করেছেন বরাবর শান্তনু-সুব্রত'রা। আর এইখানেই তৃণমূল নেত্রীর মাস্টারস্ট্রোক! হরিচাঁদ ঠাকুর - গুরুচাঁদ ঠাকুরের সরাসরি বংশধর পঁচিশ বছর এক মাস বয়সী মধুপর্ণা ঠাকুর (কপিলকৃষ্ণ-মমতাবালা'র কন্যা)কেই বাগদায় প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। অর্থাৎ সরাসরি ঠাকুর পরিবারের মেয়ে আবারো তৃণমূলের প্রার্থী। লোকসভা নির্বাচনের ক'দিন আগে বড়মা বীনাপানি দেবী'র ঘরে তালা দেওয়া নিয়ে তীব্র বিতন্ডায় বড়মার ঘরের সামনে ধর্নায় বসে প্রথম খবরের শিরোনামে আসেন মধুপর্ণা।সেই মধুপর্ণার ওপরই বাজি ধরেছে তৃণমূল। পার্থক্য ২০ হাজারের সামান্য কিছু বেশী ভোটের। পারবেন মধুপর্ণা? পারলেই দেশের কনিষ্ঠতম বিধায়ক হিসেবে রেকর্ড গড়বেন! তাঁর উল্টোদিকে বিজেপি প্রার্থী করেছে শান্তনু ঘনিষ্ঠ বিনয় কুমার বিশ্বাস কে। যদিও বিনয় কে প্রার্থী করা নিয়ে দলের অন্দরেই তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে! পাল্টা নির্দলে দাঁড়িয়ে গেছেন বিজেপিরই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা সত্যজিৎ মজুমদার! বাম কংগ্রেসের জোটও হয়নি এই আসনে। কংগ্রেসের সাথে সাথে ফরোয়ার্ড ব্লকও প্রার্থী দিয়েছে বাগদায় । সব মিলিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের সাক্ষী হতে চলেছে এই 'মতুয়াগড়'।
একইরকমভাবে রানাঘাট দক্ষিণেও মতুয়া ভোটই ঠিক করবে এই বিধানসভার প্রার্থীর ভাগ্য। মুকুটমনি অধিকারী লোকসভাতে হারলেও তার ওপরেই ফের একবার ভরসা রেখেছে তৃণমূল। মুকুটমনির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ নিজের হারানো আসন পুনরূদ্ধার করার। রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার এই আসনে ৩৯,৯০০ ভোটে লিড নিয়েছেন কয়েকদিন আগেই। বিজেপির প্রার্থীও জগন্নাথ ঘনিষ্ঠ মনোজ বিশ্বাস। এই আসনে যদি তৃণমূল জেতে, তবে নদীয়া জেলা, বিশেষত রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য তা খানিকটা স্বস্তির হবে। এমনিতেই রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ। স্থানীয় সাধারণ মানুষের অভিযোগ, রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল নেতারা স্রেফ নিজেদেরটা গোছাতে ব্যস্ত! পঞ্চায়েত বা পৌরসভায় এখানে নিজেদের আসনগুলো নেতারা জিতে নেন। কিন্তু, লোকসভা এবং বিধানসভায় দল চূড়ান্ত ব্যর্থ হয় বারবার! রানাঘাট সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের এই 'পারফরম্যান্সে' যে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরক্ত, তা একাধিকবার প্রকাশ্যে এসেছে। এখন দেখার যে রানাঘাট দক্ষিন কেন্দ্রটি জিতে বিজেপির মতুয়া ভোটে ভাগ বসাতে পারে কিনা তৃণমূল!
বাকী দু'টি আসনের মধ্যে রায়গঞ্জ আসনটিতেও বিজেপি ৪৬,৮০০ ভোটে এগিয়ে। উত্তরবঙ্গ বারবার হতাশ করেছে তৃণমূল কে! এই লোকসভা নির্বাচনেও কোচবিহার ছাড়া বাকী সব ক'টি আসন থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে। স্বাভাবিকভাবেই, রায়গঞ্জে কৃষ্ণ কল্যানী যদি নিজের জেতা আসন ফের একবার জিততে পারেন, তাহলে তা স্বস্তি দেবে গোটা উত্তরবঙ্গেরই তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের। যেমন ধূপগুড়ি উপনির্বাচন দিয়েছিলো। কৃষ্ণ কল্যানীর প্রার্থীপদ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও খানিক আওয়াজ উঠেছিলো। কিন্তু শেষ অবধি কৃষ্ণ কল্যানী'র সমর্থনেই প্রচারে বেড়িয়েছেন তৃণমূলের নবীন-প্রবীন সব পক্ষ। এখানেও লড়াইটা কার্যত তৃণমূল আর বিজেপিরই। বিজেপির পক্ষে প্রার্থী হয়েছেন সাংসদ কার্ত্তিক চন্দ্র পালের ঘনিষ্ঠ মানস ঘোষ। তৃণমূল জানে, উত্তরবঙ্গের একটা আসন মানেও সেটা 'কেক ওয়াক'। আর বিজেপির চ্যালেঞ্জ উত্তরবঙ্গে নিজেদের জয়ের ধারা কে অক্ষুন্ন রাখা! ফলে উপনির্বাচন হলেও, রায়গঞ্জ আসনের দিকে নজর থাকবেই রাজ্য রাজনীতির বিশ্লেষকদের!
এবং মানিকতলা। এই একটি আসন যা নিয়ে গত আড়াইবছরে বির্তক হয়েছে সবচেয়ে বেশী! ২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে সাধন পান্ডের প্রয়ানের পর থেকে গত আড়াই বছর বিধায়কহীন থেকেছে এই বিধানসভার সাধারণ মানুষ। বিধায়ককে ছাড়া নানারকম নিত্য নৈমিত্তিক কাজে নানা অসুবিধায় পরেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু তার পরেও ২০২১ এর নির্বাচনে হেরে গিয়ে বিজেপি প্রার্থী কল্যান চৌবে'র করা মামলার প্রেক্ষিতে এই বিধানসভায় ভোট করায়নি নির্বাচন কমিশন! মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এরকম মামলা'র যে আদতে কোনো মূল্যই নেই তা নিয়ে কোনো আওয়াজ তোলেনি শাসক বিরোধী কেউই! এমনকি অদ্ভুত নীরাবতা বজায় রেখেছে বামেরাও! সমস্ত মামলা মোকদ্দমা শেষে অবশেষে যখন মানিকতলায় নির্বাচন হচ্ছে, তখন সেখানে ফের একবার বিজেপি প্রার্থী সেই কল্যান চৌবে'ই! যার মামলার ভিত্তিতেই আড়াই বছর বিধায়কহীন রইলো এই বিধানসভা! তৃণমূলের প্রার্থী নিয়েও কম বির্তক হয়নি। সাধন কন্যা শ্রেয়া পান্ডে'র বদলে সাধন জায়া সুপ্তি পান্ডে'র তৃণমূলের টিকিট পেয়ে যাওয়া দেখে খানিক চমকেই গেছিলো রাজ্য রাজনীতির কারবারিরা৷ রাতারাতি বদলাতে হয়েছিলো দেওয়াল লিখন। মেয়ের বদলে মায়ের মুখ দিয়ে ফ্লেক্স ছাপাতে হয়েছিলো স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। ২০২১শে প্রায় ২১হাজার ভোটে এই বিধানসভায় জেতেন সাধন পান্ডে।কোনো এক 'অজ্ঞাত' কারনে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিধানসভায় 'লিড' পান মাত্র সাড়ে তিন হাজারের মতো! বিধায়ক পরেশ পালের ওয়ার্ড সহ দু'টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে পরে তৃণমূল কংগ্রেস! কলকাতার এই বিধানসভাটিতে একটা বড় অংশের ভোটাররা হিন্দিভাষী। তৃণমূল এবং বিজেপি দুই দলের প্রার্থীরাই আদতে হিন্দিভাষী পরিবারেরই। বামেরা এখানে প্রার্থী করেছেন রাজীব মজুমদারকে। রাজীব বাবু ২০১৬ তে সিপিএমের টিকিট পেলেও, ২১ এর নির্বাচনে টিকিট পাননি! উপনির্বাচনে আবার তাকে টিকিট দিয়েছে সিপিএম!
লোকসভা নির্বাচনের ওয়ার্ডভিত্তিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, শহুরে ভোটারদের একটা বড় অংশ তৃণমূল বিমুখ! কলকাতা কর্পোরেশনের ১৪৪ টি'র মধ্যে ৪৭ টি ওয়ার্ডে লিড পেয়েছে বিরোধীরা।পার্শ্ববর্তী বিধানসভা বিধাননগরেও লিড পেয়েছে বিজেপি। তারপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সক্রিয় হয়েছেন। দলের অন্তর্তদন্তে দেখা গেছে একাধিক কাউন্সিলররা বেআইনি নির্মান থেকে শুরু করে নানা রকম অনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত! মানিকতলা উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস যদি ফের নিজেদের ভোট বাড়াতে পারে, তবে কলকাতায় তৃণমূল বাড়তি অক্সিজেন পাবে। কিন্তু তৃণমূলের 'লিড' যদি ২০২১ এর নির্বাচনের তুলনায় কমে যায় তবে তা কিন্তু ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রবল অস্বস্তির হবে শাসক দলের জন্য!
সব মিলিয়ে উপনির্বাচন হলেও, অঙ্ক যে খুব জলের মতো পরিস্কার এমনটা বলা যাচ্ছেনা। বরং এই চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ওপর নির্ভর করেই আগামীদিনে রাজ্য রাজনীতির অনেক সিঁড়ি ভাঙা অঙ্ক যে নির্ধারিত হবে, তা এখন থেকেই বলা যায়